সালাফিদের মূলনীতি
সালাফিদের মূলনীতি (আল-মানহাজ আস-সালাফি) কুরআন ও সহিহ সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে গঠিত, যা রাসূল ﷺ, সাহাবিগণ, তাবেয়িন ও তাবে-তাবেয়িনদের (সালাফে সালিহীন) অনুসরণের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে। নিচে সালাফি মানহাজের মূলনীতিগুলো দেওয়া হলো:
১. তাওহিদ (একত্ববাদ) বিশুদ্ধভাবে অনুসরণ করা
🔹 তাওহিদ তিন ভাগে বিভক্ত:
1️⃣ তাওহিদ আর-রুবুবিয়্যাহ (আল্লাহর একত্ব স্বীকার করা যে, তিনি একক সৃষ্টিকর্তা ও পরিচালনাকারী)
2️⃣ তাওহিদ আল-উলুহিয়্যাহ (শুধু আল্লাহর জন্য ইবাদত করা, কারও কাছে সাহায্য চাওয়া বা সিজদা না করা)
3️⃣ তাওহিদ আল-আসমা ওয়াস-সিফাত (আল্লাহর নাম ও গুণাবলী কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী গ্রহণ করা, বিকৃতি না করা)
📖 প্রমাণ:
وَمَا خَلَقْتُ ٱلْجِنَّ وَٱلْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
“আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য।”
📖 (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)
২. কুরআন ও সহিহ হাদিসই একমাত্র শরিয়তের উৎস
🔹 সালাফিরা কুরআন ও সহিহ হাদিসকে একমাত্র ধর্মীয় দলিল হিসেবে গ্রহণ করে এবং কিয়াস, মনগড়া মতামত বা বিদআত পরিহার করে।
📖 প্রমাণ:
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِى شَىْءٍۢ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ
“তোমরা কোনো বিষয়ে মতভেদ করলে, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।”
📖 (সূরা আন-নিসা: ৫৯)
৩. রাসূল ﷺ ও সাহাবিদের মানহাজ অনুসরণ করা
🔹 সালাফিরা দ্বীনের সব বিষয়ে রাসূল ﷺ, সাহাবি, তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়িনদের (সালাফে সালিহীন) পদ্ধতি অনুসরণ করে।
📖 প্রমাণ:
وَٱتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَىَّ
“যে আমার দিকে ফিরে আসে, তার পথ অনুসরণ করো।”
📖 (সূরা লুকমান: ১৫)
📖 রাসূল ﷺ বলেছেন:
“আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার যুগ, এরপর তাবেয়িদের যুগ, এরপর তাবে-তাবেয়িদের যুগ।”
📖 (সহিহ বুখারি: ২৬৫২, সহিহ মুসলিম: ২৫৩৩)
৪. বিদআত (দ্বীনের নতুন সংযোজন) থেকে বেঁচে থাকা
🔹 সালাফিরা দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজন বা পরিবর্তনকে (বিদআত) কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
📖 রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করবে যা এর অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।”
📖 (সহিহ বুখারি: ২৬৯৭, সহিহ মুসলিম: ১৭১৮)
৫. শিরক ও কবরপূজা পরিহার করা
🔹 সালাফিরা কবর, পীর, দরগা বা মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া, নজর-নেওয়াজ দেওয়া ও তাবারক গ্রহণের মতো শিরকি কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে বর্জন করে।
📖 আল্লাহ বলেন:
إِنَّهُۥ مَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ ٱلْجَنَّةَ وَمَأْوَىٰهُ ٱلنَّارُ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।”
📖 (সূরা আল-মায়িদাহ: ৭২)
৬. ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করা
🔹 সালাফিরা ইসলামের প্রতিটি বিধান মেনে চলে, হালাল-হারামকে গুরুত্ব দেয় এবং শরিয়াহকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে চায়।
📖 আল্লাহ বলেন:
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا ٱدْخُلُوا فِى ٱلسِّلْمِ كَآفَّةً
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ করো।”
📖 (সূরা আল-বাকারা: ২০৮)
৭. দলবাজি ও ফিরকা (বিভক্তি) পরিহার করা
🔹 সালাফিরা নিজেকে শুধুমাত্র “মুসলিম” বলে পরিচয় দেয় এবং দল, মাযহাব বা ফিরকা ভিত্তিক বিভাজনকে প্রত্যাখ্যান করে।
📖 আল্লাহ বলেন:
إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُوا۟ دِينَهُمْ وَكَانُوا۟ شِيَعًۭا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِى شَىْءٍ
“যারা দ্বীনকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছে, তাদের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই।”
📖 (সূরা আল-আনআম: ১৫৯)
📖 রাসূল ﷺ বলেছেন:
“এই উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, তার মধ্যে মাত্র এক দল জান্নাতে যাবে।”
📖 (সুনান আবু দাউদ: ৪৫৯৭, তিরমিজি: ২৬৪১)
➡ সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, “হে রাসূল ﷺ! সেই একদল কারা?”
➡ তিনি বললেন, “যারা আমার ও আমার সাহাবিদের পথ অনুসরণ করে।”
৮. শরিয়াহভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কামনা করা
🔹 সালাফিরা চায়, সমাজ ও রাষ্ট্র কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে পরিচালিত হোক, মানবপ্রণীত আইন নয়।
📖 আল্লাহ বলেন:
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَـٰئِكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ
“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে শাসন করে না, তারাই জালিম।”
📖 (সূরা আল-মায়িদাহ: ৪৫)
উপসংহার
সালাফি মানহাজ মূলত রাসূল ﷺ ও তাঁর সাহাবিদের নির্ভেজাল ইসলাম অনুসরণ করা। তারা কুরআন ও সহিহ হাদিসের উপর নির্ভরশীল, বিদআত বর্জন করে, তাওহিদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং দ্বীনের প্রতিটি বিধানকে জীবনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে।
📌 এই মানহাজই একমাত্র সঠিক পথ, যা জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়, ইনশাআল্লাহ। 🤲
📖 আল্লাহ বলেন:
وَمَن يَعْتَصِم بِٱللَّهِ فَقَدْ هُدِىَ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍ
“যে আল্লাহকে অবলম্বন করবে, সে অবশ্যই সরল পথে পরিচালিত হবে।”
📖 (সূরা আলে ইমরান: ১০১)