সালাফী নীতিমালা
মহান আল্লাহর মনোনীত দ্বীনে যুগে যুগে ভেজাল প্রবিষ্ট হয়েছে। বলা বাহুল্য, পৌত্তলিকরা মুসলিম ছিল, তারা ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মুশরিক হয়েছে। ইয়াহুদীরা মুসলিম ছিল, তারা ইসলাম থেকে সরে এসে ইয়াহুদী হয়েছে। খ্রিস্টানরা মুসলিম ছিল, তারা ইসলামের পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে খ্রিস্টান হয়েছে। সর্বশেষ নবী (সা.) এর ইসলামী শরীয়ত আসার পরেও তাতে বহু ভেজাল অনুপ্রবেশ করেছে। আর এক-একটি ফির্কা এক-একটি নাম নিয়ে স্বচ্ছ ইসলাম থেকে সরে বসেছে।
অন্যান্য সকল ফির্কার নিজ নিজ নীতি ও মানহাজ আছে, নামও আছে। প্রকৃত স্বচ্ছ ইসলামেরও নীতি ও মানহাজ আছে, যার নাম সালাফিয়াত। এ সালাফী নীতি কুরআন ও সুন্নাহকে সাহাবাগণের বুঝে বোঝে এবং আমল করে। সালাফী সকল সাহাবাগণকে শ্রদ্ধা করে ও ভালোবাসে। মহানবী -এর আহলে বায়তকেও যথার্থ ভালোবাসে। কারো প্রতি অবজ্ঞা করে না অথবা বিদ্বেষ পোষণ করে না। আবার কাউকে নিয়ে অতিরঞ্জনও করে না।
সুতরাং সালাফী নীতিতে সাহাবাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য হল, আমরা তাদেরকে ভালোবাসব, শ্রদ্ধা করব, সম্মানের সাথে তাদের নাম নেব। তাদের প্রতি ভক্তিতে আমাদের মন-প্রাণ পরিপ্লত থাকবে। যেহেতু তারা আমাদের শ্রদ্ধাভাজন, ভক্তিভাজন ও মান্যবর।
যাদের দলীল আমরা গ্রহণ করব
আমরা তাদের উক্তি ও আমলকে দলীল মনে করব, যদি তা সহীহ প্রমাণিত হয় এবং রসূল ৯ি-এর উক্তি ও আমলের পরিপন্থী না হয়। আমরা তাদের ইজমা’ (ঐক্যমত)কে মেনে নেব। আমরা তাঁদের অনুসরণ করব। সালাফীদের নিকট প্রত্যেক সাহাবীই বিশ্বস্ত ও সম্মানাই মানুষ। তার প্রত্যেক কথা বিশ্বাসযোগ্য। তার প্রত্যেক খবর নির্ভরযোগ্য। নবী প্রকি থেকে তার পৌঁছানো প্রত্যেক কথা গ্রহণযোগ্য।
সাহাবাগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী।
এ নির্ভরযোগ্যতা দান করেছেন খোদ মহান আল্লাহ ও তার রসূল । আল্লাহ ও তার রসূল তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তারাই শ্রেষ্ঠ আওলিয়া এবং আল্লাহর নির্বাচিত বন্ধুবর্গ। তারাই সৃষ্টির সেরা মানুষ এবং নবীর পরে এ উম্মতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মুসলিম।
তারা বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্য তাদের দ্বীন ও ঈমানদারিতে, দ্বীন ও শরীয়তের বর্ণনা ও বহন করাতে। তাদের কারো কারো মাঝে যে। ইজতিহাদী ত্রুটি ছিল, আল্লাহ ও রসুলের প্রশংসায় তা বিলীন হয়ে গেছে।
দ্বীন ও শরীয়ত, কুরআন ও সুন্নাহর ধারক ও বাহক তারাই। তারা নবীর আদেশ পালন করেছেন বলেই আমরা আমাদের দ্বীন ও শরীয়ত সঠিকরূপে প্রাপ্ত হয়েছি।
আমাদের জন্য তারা কি করেছেন
তারা বড় আমানতদারির সাথে দ্বীন আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বড় যত্নের সাথে নবীর সুন্নাহর হিফাযত করেছেন। দ্বীনের পতাকাকে সমুন্নত রেখে উডডীন করেছেন।
তাদের মধ্যে কেউ নেই, যাকে মিথুক ভাবা যাবে। এমন কেউ নেই, যাকে অনির্ভরযোগ্য বলে সন্দেহ করা যাবে। তাদের মধ্যে নানা ফিতনা সৃষ্টির পরেও তাদের বিশ্বস্ততা খোয়া যায়নি।
সাহাবাদের প্রতি আমাদের আরেকটি কর্তব্য হল, আমরা তাদের জন্য দুআ করব। এটা তাদের প্রাপ্য। দ্বীনের স্বার্থে যারা নিজেদের জান-মাল ব্যয় করে গেছেন, তারা কি দুআ পাওয়ার হকদার নন? অবশ্যই।
সুতরাং আমরা তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার দুআ করব, তাদের প্রতি করুণা বর্ষণের আবেদন জানাব এবং তাদের প্রতি তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করব।
আমরা আমাদের হৃদয়-মনকে তাদের ব্যাপারে পরিষ্কার রাখব। আমাদের মনে তাদের প্রতি কোন প্রকারের বিদ্বেষ থাকবে না, কূট ও ঘৃণা থাকবে না। তাদের কোন প্রকার দুর্ঘটনা শুনে আমাদের মন তাদের প্রতি কোনরূপ বিরূপ ও ক্ষুব্ধ হবে না। এ কথা মহান আল্লাহর শিখানো উক্ত দুআতেই রয়েছে।
তাদের কোন ত্রুটি শুনে অথবা তাদের প্রতি কোন কুধারণা করে তাদেরকে কোন প্রকার গালাগালি করব না, তাদের কোন সমালোচনা করব না।
তাদের নামে আলোচনা
আমরা তাদের মাঝে ঘটিত দুর্ঘটনার কথা আলোচনা করব, কিন্তু সমালোচনা করব না। কারণ সমালোচনা এক প্রকার গালি। আর যেহেতু তারা দ্বীনের ধারক, বাহক ও প্রচারক। সুতরাং তাদের। সমালোচনা করার মানেই দ্বীনের সমালোচনা করা।
তাদের কোন ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে কারো বিরুদ্ধে। কুমন্তব্য ও কটুক্তি করাই হল সমালোচনা করা। যে সমালোচনায়। তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় অথবা তাদের সম্ভ্রমে আঘাত লাগে, তা করার। মানেই তাদেরকে গালি দেওয়া। আর তা আমাদের জন্য বৈধ নয়।
বৈধ নয় তাদের বিশ্বস্ততা, আমানতদারী, সততা, সত্যবাদিতা ও ন্যায়পরায়ণতায় কোন প্রকার সন্দেহ করা। বলনে বা লিখনে তাদের প্রতি কটাক্ষ করা, ব্যঙ্গোক্তি করা, তাচ্ছিল্য প্রকাশ করা, একজন। সাহাবীর পক্ষ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অপরকে তুচ্ছ করা বৈধ নয়।
তারা কোন সম্প্রদায়
তারা সেই সম্প্রদায়, যাদের রক্ত থেকে আল্লাহ আমাদের হাতকে পবিত্র রেখেছেন। সুতরাং আমাদের উচিত, আমরা আমাদের জিহ্বাকে তাদের সম্মান লুটা থেকে পবিত্র রাখব। সালাফীরা সাহাবাকে ভুলের উর্ধে ধারণা করে না। যেমন তাদের কাউকে নিয়ে বাড়াবাড়িও করে না।
সালাফিদের ইবাদ
সালাফীরা কেবল মহান আল্লাহর ইবাদত করে, তার ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক করে না। সহীহ সুন্নাহর তরীকা ও পদ্ধতি মতে ইবাদত করে এবং প্রত্যেক বিদআতকে প্রতিহত করে। সৎকাজে আদেশ দেয় এবং মন্দকাজে বাধাদান করে।
সালাফীরা কুরআন কারীম এবং সহীহ হাদীসে বর্ণিত সেই সমস্ত সিফাত বা গুণ, যার দ্বারা আল্লাহ নিজেকে গুণান্বিত করেছেন অথবা তার রসূল ও তার জন্য বর্ণনা করেছেন তা বাস্তব ও প্রকৃত ভেবে, কোন প্রকারে তার অপব্যাখ্যা না করে, কোন উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত। কল্পনা না করে এবং তার প্রকৃতার্থ ‘জানি না বলে সে বিষয়ে আল্লাহকে ভারার্পণ না করে ঈমান ও প্রত্যয় রাখে।
তাওহীদ
তাওহীদুর রবুবিয়্যাহ, তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ ও তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাতে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে ও তা বাস্তবায়ন করে। আর একমাত্র আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা, কুরআন দ্বারা মীমাংসা ও রাষ্ট্র পরিচালনা করা, শরীয়তের নিকটেই নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের। বিচারপ্রার্থী হওয়া, এ সব কিছু তওহীদুল ইলাহের শামীল।
সালাফীরা সদা-সর্বদা কিতাব ও সুন্নাহকে মাথার উপরে রাখে। তার ফায়সালাকেই চূড়ান্ত বলে মান্য করে। তার উপরে কারো কথা, রায়, কিয়াস, খেয়ালখুশি, বিবেক, যুক্তি বা মযহাবকে প্রাধান্য দেয় না।
সালাফীদের শ্রদ্ধা
সালাফীরা আয়েম্মায়ে মুজতাহিদীন (মুজতাহিদ সকল ইমাম)কে শ্রদ্ধা করে। তাদের মধ্যে কোন একজনের একতরফা পক্ষপাতিত্ব করে না। বরং ফিকহ (দ্বীনের জ্ঞান) গ্রহণ করে কুরআন ও সহীহ হাদীসসমূহ হতে এবং তাঁদের উক্তিসমূহ হতেও—যদি তা সহীহ হাদীসের অনুসারী হয়। আর এই নীতিই তাদের নির্দেশের অনুকূল। যেহেতু তাঁরা সকলেই নিজ নিজ অনুসারিগণকে সহীহ হাদীসের মত গ্রহণ করতে এবং এর প্রতিকুল প্রত্যেক মত ও উক্তিকে প্রত্যাখ্যান। করতে অসিয়ত করে গেছেন। সালাফীরা আল্লাহর দ্বীন তথা তাওহীদ ও আকীদায় কোন প্রকার অন্যায় ও বাতিলের সাথে আপোস করে না।
লিখেছেনঃ আবদুল হামীদ ফাইযী
জাযাকাল্লাহু খাইরান
ওয়া আংতুম ফী জাযাকাল্লাহ খয়রান 🙂